কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ১০টি সুবিধা ও অসুবিধা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জানুন। প্রযুক্তির এই আবিষ্কার কিভাবে আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলছে তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো।


কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার-(AI)-১০টি-সুবিধা-ও-অসুবিধা


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা ও অসুবিধা বর্তমানে প্রযুক্তি জগতের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় গুলোর মধ্যে একটি। 21 শতাব্দীর সবচেয়ে বিস্ময় কর উদ্ভাবন গুলোর একটি হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা(AI), যা আমাদের দৈনন্দিন জীবন, শিক্ষা , স্বাস্থ্য ,ব্যবসা এমনকি নীতি নির্ধারণেও ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। তবে এই প্রযুক্তির যেমন প্রচুর সুফল রয়েছে তেমনি কিছু গুরুতর কুফলও রয়েছে যা এড়িয়ে যাওয়া যায় না।

পোস্ট সূচিপত্রঃ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ১০টি সুবিধা ও অসুবিধা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা ও অসুবিধাঃ প্রযুক্তির জগতে

বিগত দশকে প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা ও অসুবিধা আরও ব্যাপকভাবে আমাদের জীবনে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহৃত হচ্ছে চ্যাট বট , স্বয়ংক্রিয় গাড়ি , ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট , এমনকি চিকিৎসা বিশ্লেষণেও।

এতে সময় , শ্রম ও খরচ বাঁচছে , সিদ্ধান্ত গ্রহণের গতি বেড়েছে। তবে প্রযুক্তিতে নির্ভরতা মানুষকে কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়ে দিচ্ছে -বিশেষ করে কর্মসংস্থানের দিক থেকে।

শিক্ষাক্ষেত্রে AI: নতুন দিগন্ত নাকি হুমকি?

শিক্ষাক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা ও অসুবিধা বড় একটি বিতর্কের জায়গায়। AI- চালিত অ্যাপ যেমন কাস্টমাইজড লার্নিং অভিজ্ঞতা তৈরি করছে , দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক হচ্ছে , তেমন একটি শঙ্কা  তৈরি করছে । তবে কি শিক্ষকের ভূমিকা কি এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে?

 AI- টুল যেমন: ChatGPT -এর AI গাইড শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে , কিন্তু এতে মৌলিক চিন্তার অভ্যাস কমে যেতে পারে। আবার পরীক্ষায় জালিয়াতি বা অপ্রত্যাশিত ব্যবহার শিক্ষার গুণগত মান প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

 স্বাস্থ্য সেবায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা ও অসুবিধা

এআই এর সবচেয়ে কার্যকর প্রয়োগ গুলোর মধ্যে একটি হলো স্বাস্থ্যখাতে। এটি রোগ নির্ণয়, ডায়াগনস্টিক বিশ্লেষণ , এবং ওষুধ উন্নয়নের অনন্য ভূমিকা রাখছে ।উদাহরণস্বরূপ এখন ক্যান্সার সনাক্তকরণে চিকিৎসকের থেকেও বেশি নির্ভুলতা দেখাচ্ছে।

কিন্তু এই সুবিধা পাশাপাশি রয়েছে নিরাপত্তা জনিত ঝুঁকি এবং মানবিক সহানুভূতির অভাব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা অসুবিধা স্বাস্থ্য সেবায় সবচেয়ে স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়ে যেখানে রোগী চায় একজন মানব ডাক্তার ,কিন্তু তাকে হয়তো একজন রোবট স্ক্যান করে রিপোর্ট দিচ্ছে।

ব্যবসা-বাণিজ্য বিপ্লবঃ কিন্তু কে থাকবে পিছনে?

আজকের প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা জগতে AI এনেছে অসাধারণ পরিবর্তন। বড় বড় কোম্পানি যখন AI দিয়ে কাস্টমার বিহেভিয়ার বিশ্লেষণ করে বিক্রির পূর্বাভাস দেয় এবং অটোমেটেড কাস্টমার সার্ভিস পরিচালনা করে।

তবে এই প্রযুক্তির একটি বড় দিক হলো মানবকর্মীর প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পাওয়া। অসংখ্য ছোট ও মাঝারি চাকরি AI দ্বারা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। ফলাফল-বেকারত্ব বৃদ্ধি , অর্থনৈতিক বৈষম্য। তাই এখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা ও অসুবিধা একটি গভীর আর্থ-সামাজিক প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সমাজ ও সংস্কৃতিতে AI- এর প্রভাব

আমাদের সামাজিক যোগাযোগ ,বিনোদন,এমনকি ব্যক্তিগত সম্পর্কেও AI-ঢুকে পড়েছে ।ফেসবুকের ফ্রেন্ড সাজেশন থেকে শুরু করে ইউটিউব এর কন্টেন্ট সাজেশন সবই AI নির্ভর।

তবে এতে যেমন আমরা আরো প্রাসঙ্গিক তথ্য পাচ্ছি , তেমনি এটি তৈরি করছে এক "বাবল"- যেখানে মানুষ কেবল তার নিজের চিন্তার মতামতই দেখতে পায়। এতে সামাজিক মিথস্ক্রিয়া হ্রাস পাচ্ছে এবং মানসিক চাপ বাড়ছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা ও অসুবিধাঃ চাকরি বনাম প্রযুক্তি

বিশ্বজুড়ে AI প্রযুক্তি যত বাড়ছে, তত বাড়ছে বেকারত্বের আশঙ্কা। গবেষণা বলছে , আগামী দশকে লাখ লাখ চাকরি অটোমেশনের কারণে বিলুপ্ত হতে পারে ।এটি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে কম দক্ষতা সম্পন্ন শ্রমিকদের ওপর ।

তবে এটাও সত্য, AI নতুন ধরনের কাজের সুযোগ তৈরি করছে যেমন- ডেটা অ্যানালিস্ট , AI ট্রেইনার , প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার ।এই পরিবর্তনে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন স্কিল ডেভেলপমেন্ট ।

আইন ও নিরাপত্তায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা ও অসুবিধা

আইন প্রয়োগে ও অপরাধ শনাক্তে AI একটি বড় সহায়ক শক্তি।  CCTV ফুটেজ বিশ্লেষণ , সন্দেহভাজনদের সনাক্তকরণে এটি দ্রুত ও কার্যকর ।

কিন্তু ,নজরদারি বাড়ার কারণে মানুষের গোপনীয়তা হুমকির মুখে পড়ছে ।এ আয় যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয়, তবে তা নির অপরাধ ব্যক্তিদের দোষী সাব্যস্ত করতে পারে। এই জন্য প্রযুক্তির সচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা অপরিহার্য।

পরিবেশগত দিকেও আছে দ্বৈত প্রভাব

জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় AI ব্যবহৃত হচ্ছে ডেটা বিশ্লেষণে , দূষণ  নিরীক্ষণে , এমনকি কৃষিতে উৎপাদন বাড়াতেও। তবে এই প্রযুক্তির পরিচালনায় যে পরিমাণ শক্তি ব্যবহৃত হয় ,তা নিজেই একটি পরিবেশগত সমস্যা।

এমনকি যেটা সেন্টার গুলো থেকে কার্বন নিঃসরণও উদ্বেগজনক। তাই পরিবেশ নিয়ে ভাবার সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা ও অসুবিধা বুঝে ব্যবহার করাই ভবিষ্যতের চাবিকাঠি।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও দিকনির্দেশনা

AI যেন মানুষের বিকল্প না হয়ে , সহায়ক হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে ।এজন্য নীতিমালা , আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং সামাজিক সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

মানুষ-নির্ভর দক্ষতা যেন সৃজনশীলতা , আবেগ , নৈতিকতা- এসব জিনিস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কখনো পুরোপুরি ধারণ করতে পারবে না। তাই এই জায়গাগুলোকে আরো জোরালোভাবে বিকশিত করতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

সবকিছু মিলিয়ে বলা যায় , কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা ও অসুবিধা আমাদের আগামী দিনের সমাজ , শিক্ষা ,স্বাস্থ্য,আইন ও ব্যবসায়ীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই প্রযুক্তি আমাদের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে , যদি আমরা তা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নিয়ন্ত্রণ ও প্রয়োগ করতে পারি।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইনফোমাস্টার বিডিতে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url